সামাজিক জরিপ পদ্ধতি কি? সামাজিক জরিপের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব আলোচনা
ভূমিকা: সামাজিক জরিপ যখন জনসংখ্যা বা সমগ্রকের একটি নমুনা নির্বাচনের মাধ্যমে ঘটনা বিন্যাস ও আন্ত এসম্পর্কের সমাজতাত্ত্বিক পর্যালোচনা করে তখন তাকে নমুনা জরিপ বলা হয়। কিন্তু নমুনায়ন ও জরিপ ভিন্নভাবে বিকশিত দুটি বিষয়। কালক্রমে জরিপের জন্য নমুনার প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। বর্তমানে নমুনা নির্ভর জরিপই প্রধান স্থান দখল করে নিয়েছে।
সামাজিক জরিপ পদ্ধতি: সাধারণভাবে জরিপ বলতে কোন বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করা বোঝায়। পদ্ধতি হিসাবে জরিপ কোনো ভৌগোলিক এলাকার জনগণের ধ্যান- ধারণা মনোভাব ও জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সামাজিক বিষয়াদি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের উপায় বা কৌশলকে নির্দেশ করে।
সামাজিক জরিপ সম্পর্কে Mark Abraham বলেন, "সামাজিক জরিপ এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একটি জনগোষ্ঠীর গঠন ও কার্যাবলির সামাজিক দিক সম্পর্কিত সংখ্যাতাত্ত্বিক তথ্যাদি সংগৃহীত হয়ে থাকে।"
E. W Burgress বলেন, "A social survey scientific study of conditions & needs a community for the purpose of presenting & constructive programme of social advanument." অর্থাৎ সামাজিক অগ্রগতির জন্য গঠনমূলক কর্মসূচি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে জনসমষ্টির হালচাল ও প্রয়োজন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক উপায় সম্পর্ক অনুসন্ধানকে সামাজিক জরিপ বলে।"
P.V. Young-এর মতে, "A survey of a community has been defined as the scientific study of it's condition & needs for the purpose of presenting a constructive programme of social advance." অর্থাৎ সমাজের অগ্রগতি ও যথার্থ কর্মসূচি প্রণয়নের লক্ষ্যে সমাজের পরিস্থিতি ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে যে তথ্য অনুসন্ধান করা হয় তাকে সামাজিক জরিপ বলে।"
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায়, সামাজিক জরিপ এমন একটি সমবেত উদ্যোগ যা একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকায় বসবাসকারী জনগণ, তাদের অবস্থা ও বিরাজমান সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে অনুসন্ধান ও অবস্থা নির্ণয়ের জন্য গবেষণা কৌশল প্রয়োগ করে থাকে এবং সাধারণত সামাজিক সংস্কার ও উন্নতি বিধানকল্পে গঠনমূলক কর্মসূচি প্রণয়নের সাথে জড়িত থাকে।
সামাজিক জরিপের বৈশিষ্ট্য ভুলে ধর ।
ভূমিকা: বর্তমান আধুনিক যুগের সমাজ ব্যবস্থায় সামাজিক জরিপের ব্যবহার দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অনুসন্ধানমূলক, বিশ্লেষণমূলক গবেষণা চালানো হয়। সামাজিক আচরণ উপলব্ধি করার জন্য সামাজিক সমস্যাবলী সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের জন্য সামাজিক গবেষণায় যেসব পদ্ধতির ব্যবহার হয় তার মধ্যে জনপ্রিয় ও ব্যাপক প্রচলিত তথ্যানুসন্ধান পদ্ধতি হলো জরিপ পদ্ধতি।
সামাজিক জরিপের বৈশিষ্ট্য: নিচে সামাজিক জরিপের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হলো:
১. তথ্য সংগ্রহ: সামাজিক জরিপ করার জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে জরিপ করতে পারলে জরিপ কাজ ভালো হয়।
২. অনুসন্ধান: সামাজিক জরিপকে একটি অনুসন্ধান পদ্ধতি হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
৩. বিশ্লেষণ: সামাজিক জরিপ করার জন্য সমাজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। তথ্য সংগ্রহের পর সেগুলো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয় এই সামাজিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে।
৪. নমুনা ভিত্তিক: সামাজিক জরিপ একটি নমুনা ভিত্তিক। সামাজিক জরিপ পরিচালনা করার জন্য নমুনা জরিপের মাধ্যমে করা হয়।
৫. নকশা: নকশা হলো সামাজিক জরিপের একটি বৈশিষ্ট্য। জরিপ কাজ করার জন্য নকশা তৈরি করতে হয়।
৬. পরিকল্পনা: জরিপের কাজকে সঠিকভাবে সহায়তা করার জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। পরিকল্পনা করার মাধ্যমে জরিপ করা হলে সে জরিপটি সহজে পরিচালনা করা যায়।
৭. সিদ্ধান্ত: জরিপ কাজ করার জন্য অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সামাজিক জরিপ ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
৮. সমগ্রক জরিপ: সামাুিজক জরিপ কাজ করার জন্য অনেক সময় সামগ্রিকভাবে কাজ করতে হয় সেটা গবেষণা পরিচালনা করার জন্য। এই সমগ্র সামাজিক পরিমাপকে কাজে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।
সর্বোপরি বলতে পারি যে, সামাজিক জরিপের যে সকল বৈশিষ্ট। আছে তাঁ সামাজিক জরিপকে তার জরিপ কাজকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং বলতে পারি যে, সামাজিক জরিপ কাজে এসব বৈশিষ্ট্য ভূমিকা অনস্বীকার্য।
সামাজিক জরিপের গুরুত্ব আলোচনা কর
সামাজিক জরিপের গুরুত্ব: সামাজিক গবেষণা করতে গিয়ে একটি কৌশল ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর সে বিষয়টি বা কৌশলটি হলো সামাজিক জরিপ। সামাজিক জরিপের মাধ্যমে সামাজিক গবেষণা করা হলে সামাজিক গবেষণা অনেক সুন্দরভাবে করা সম্ভব হয়। নিম্নে সামাজিক জরিপের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।
১. জনগণের অংশগ্রহণ: সামাজিক জরিপ এমন একটি পদ্ধতি যেখানে জনগণের সক্রিয়তা দেখা যায়। এখানে জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া জরিপ কাজ সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না। তাই জরিপ পদ্ধতিতে জনগণের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. নির্ভরযোগ্য তথ্য: জরিণ পদ্ধতিতে নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। এ পদ্ধতি অন্যান্য পদ্ধতি থেকে আলাদা। এ পদ্ধতিতে জরিপ কাজ পরিচালনা করা যেমন সহজ ঠিক তেমনি এ পদ্ধতিতে যে সব তথ্য পাওয়া যায় তাও নির্ভরযোগ্য। কারণ এ পদ্ধতিতে সকলের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়।
৩. পরিকল্পনা মূল্যায়ন: সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন পূর্বপরিকল্পনা করা। পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজকে সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। কোনো কাজ ভালোভাবে করার জন্য পরিকল্পনা করতে হবে কোন কাজ কিভাবে করবো। কিভাবে কাজ করলে কাজে ভালো ফল আসবে কাজের অগ্রগতি আসবে তা এই পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্ভব। পরিকল্পনা করার পর তা ঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। মূল্যায়ন করতে হবে কাজের মাধ্যমে। তাই জরিপ পদ্ধতিতে পরিকল্পনা মূল্যায়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪. জটিল সমস্যার সমাধান: সমাজে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বিদ্যমান। কিছু সমস্যা সহজে সমাধান করা যায়। আর কিছু সমস্যাকে সমাধান করা খুবই কঠিন ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ ধরনের জটিল সমস্যাকে সমাধান করার জন্য বিভিন্ন ধরনের পন্থা অবলম্বন করতে হয়। আর এ ধরনের সমস্যা তখনই পাওয়া যায় যখন জরিপ কাজ চারানো হয়। জরিপ কাজের মাধ্যমে যেমন জটিল সমস্যা পাওয়া যায় ঠিক তেমনি কিভাবে এর সমাধান করতে হবে তাও এ জরিপ পদ্ধতিতে বের করা যায়।
৫. সামাজিক উন্নয়ন: সমাজের অবস্থানকে উন্নত থেকে কিভাবে আরো উন্নতর করা যায় তার জন্য জরিপ পদ্ধতি ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. বিশেষ জ্ঞান: সামাজিক জরিপের মাধ্যমে আমরা বিশেষ জ্ঞান অর্জন করতে পারি। আমরা জরিপ করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে হয়। সঠিক জ্ঞান না থাকলে কোনো বিষয়ে সঠিক ধরনের তথ্য বের করা সম্ভব হবে না। কোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের জ্ঞান থাকতে হবে। সামাজিক জরিপ করতে গিয়ে এই বিশেষ ধরনের জ্ঞান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৭. পরিকল্পনা প্রণয়ন: সামাজিক জরিপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের বিষয় সম্পর্কে জানা যায়। পরিকল্পনা এমনভাবে করতে হয় ঐ পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজের সব ধরনের সমস্যা বের হয়ে আসে। পরিকল্পনা সামাজিক জরিপের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি। কোনো কাজ করার জন্য পরিকল্পনা করে সে কাজ করতে হয়। পরিকল্পনা না করলে কোনো কাজ ভালোভাবে করা যায় না। সুতরাং সামাজিক জরিপে পরিকল্পনা প্রণয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৮. সিদ্ধান্ত গ্রহণ: কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হলে সে বিষয় সম্পর্কে ভালোভাবে গবেষণা করার পর সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হয়। এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় মূলত সামাজিক জরিপে। সামাজিক জরিপে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে ব্যাপক ভূমিক পালন করে।
৯. তথ্য উদঘাটন: সামাজিক গবেষণায় মূল উদ্দেশ্য হলো তথ্য উদঘাটন করা। প্রকৃত তথ্য কিভাবে উদঘাটন করা হবে তার জন্য সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ।
ফলাফল: সামাজিক গবেষণার ফলাফল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জরিপ করতে গিয়ে একটি ফলাফল বের করতে হয়। আর এ ধরনের ফলাফলের জন্য সামাজিক জরিপ গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: পরিশেষে বলা যায় যে সামাজিক গবেষণা করার জন্য সামাজিক জরিপে গুরুত্ব ব্যাপক। সামাজিক গবেষণার কাজকে সঠিকভাবে করার জন্য সামাজিক জরিপ ব্যাপকভাবে ভূমিকা পালন করে।